লিভার সিরোসিস যকৃতের জটিল একটি রোগ। এই রোগ একবার হয়ে গেলে তা নিরাময় খুবই কঠিন। সে ক্ষেত্রে একমাত্র স্থায়ী সমাধান হতে পারে লিভার প্রতিস্থাপন। এটি খুবই ব্যয়বহুল চিকিৎসা।
লিভার বা যকৃতের কাজ কী: যকৃৎ আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়া সম্পাদন করে। খাদ্যের অতিরিক্ত গ্লুকোজ এতে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে। যকৃৎ শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় অ্যালবুমিন এবং অন্যান্য প্রোটিনের মূল জোগানদাতা। রক্ত তরল রাখার বেশকিছু উপাদান যকৃতে তৈরি হয়। শরীরের অনেক দূষিত উপাদান, বর্জ্য ও ওষুধের বিপাকজনিত বর্জ্য বের করে দিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিভার সিরোসিস হলে এসব কাজ ব্যাহত হয়।
উপসর্গ
* ক্লান্তি, দুর্বলতা, অরুচি, ওজন কমে যাওয়া।
* জন্ডিস হওয়া।
* জটিল পরিস্থিতিতে পেটে পানি জমে ফুলে যাওয়া, পায়েও পানি আসা।
* সিরোসিসের রোগীর রক্তে বিপাকজনিত বর্জ্য জমে যায় বলে মস্তিষ্কে এনকেফালোপ্যাথি হয়।
* রক্তবমি এবং পায়খানার সঙ্গে কালো রক্ত যেতে পারে।
* লিভার সিরোসিস থেকে ক্রমে লিভারে ক্যান্সার হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সে ক্ষেত্রে পেটে শক্ত চাকা আর পানি জমে।
লিভার সিরোসিসের কারণ: হেপাটাইটিস বি, সি, ডি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ এবং মদ্যপানের কারণে সাধারণত লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এ ছাড়া এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফ্যাটি লিভার থেকে সৃষ্ট ন্যাশ। লিভার সিরোসিসের কিছু বিরল কারণের মধ্যে আছে উইলসন ডিজিজ, হেমোক্রোমাটোসিস এবং আলফা-ওয়ান অ্যান্ট্রিপসিন ডেফিসিয়েন্সি।
প্রতিরোধ যেভাবে: লিভার সিরোসিসের কারণগুলো প্রতিহত করা গেলে এ রোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশে অ্যালকোহলজনিত সিরোসিস ও ফ্যাটি লিভারের হার বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ শর্করা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ।
প্রতিরোধে যা করবেন: লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় শুধু অর্থ থাকলেই হবে না, যকৃতের দাতাও লাগবে। আবার সেই যকৃৎ ম্যাচিং হতে হবে। তাই চিকিৎসার চেয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা ভালো।
* হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধে ছোট-বড় সবাইকে টিকা নিতে হবে।
* নিরাপদ রক্তসঞ্চালন নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ রক্তদাতার রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
* ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, রেজার ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
* অনিরাপদ যৌন সংসর্গ এড়িয়ে চলতে হবে।
* কেউ হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে সংক্রমিত হলে পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিতে হবে।
* ওজন ও রক্তে শর্করা এবং চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেন ফ্যাটি লিভার না হয়।
লেখক:
অধ্যাপক ও ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঞ্চলিক পরামর্শক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা।