হাতে পতাকা ফুল মিষ্টি, চোখে ‘আনন্দাশ্রু’

সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আলী হোসেনের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তার বাবা-মা অসুস্থ। সে কারণে চট্টগ্রাম থেকে আলী হোসেনকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন তার চট্টগ্রামে থাকা শ্বশুর জামাল মাহমুদ মামুন ও শাশুড়ি সালমা বেগম।

চট্টগ্রাম বন্দরের এমসিটি-১ জেটি প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরের পর থেকে অপেক্ষারত আলী হোসেনের শ্বশুর জামাল মাহমুদ মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।

গত দুই মাস আগে জলদস্যুদের হাতে জামাই জিম্মি হবার পর আমরা সবাই খুবই ভয় ও আতঙ্কে ছিলাম। জিম্মি থেকে মুক্ত হয়ে জামাই আজকে আসছেন। তাকে বাড়ি নেওয়ার জন্য আমরা এসেছি। জামাই ফেরার এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মত না।


আরেক নাবিক নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। গত রাত থেকে ঘুমাতে পারছি না। কখন তাকে দেখব।


নাবিক ছালে আহমদের স্ত্রী তানিয়া আকতার বলেন, ‘আজকের দিনটি খুবই আনন্দের।’

এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে ২৩ নাবিককে নিয়ে আসা লাইটার জাহাজ এমভি জাহানমণি-৩। ভেড়ার আগে থেকেই প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে জাহাজটি যতই জেটির দিক আসছিল ততই স্বজনসহ উপস্থিত সকলের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কারো হাতে জাতীয় পতাকা, কেউ ফুলের তোড়া নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে জেটিতে এমভি জাহাজমণি লাইটারেজ জাহাজ ভেড়ে।

এ সময় সেখানে নাবিক ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস দেখা গেছে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে গত ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। ১৯ মার্চ জাহাজটি এসব পণ্য নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

এদিকে মাপুতু বন্দর থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

এরপর দীর্ঘ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার আট দিনের মাথায় গত ২১ এপ্রিল নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছে। জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহিনোঙর থেকে ওই বন্দরের জেটিতে ভিড়ে ২২ এপ্রিল। এরপর ওই বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর নতুন ট্রিপের পণ্য (চুনা পাথর) লোড করতে পার্শ্ববর্তী ইউএইর মিনা সাকার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাজটি। সেখানে ৫৬ হাজার টন চুনা পাথর নিয়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ গত ৩০ এপ্রিল দুবাই মিনা সাকার বন্দর থেকে দেশের পথে রওনা হয়। অবশেষে সেই জাহাজটি গতকাল দুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *